ছাত্রী যখন বউ



ঘুমানোর সময় কেউ ফোন করলে আমার খুব
বিরক্ত লাগে । আর যদি কাঁচা ঘুম ভাঙ্গে, তাহলে
মেজাজটা এমন খারাপ হয় যে বলার
অপেক্ষা রাখে না ।এই সময় তেমনই মেজাজ খারাপ হচ্ছে
মোবাইলটার উপর । সবে মাত্র চোখটা
লেগে এসেছিল আর তখনই  ফোনটা
বেজে উঠল ।😡😡 কলার কে খুব একটা ধমক
দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই ফোনটা
হাতে নিলাম কিন্তু স্ক্রিনে নামটা
দেখে অবাকই হতে হল । নীলার মা
ফোন দিয়েছে !
এতো রাতে ?😰😰
নীলা ফোন দিলে না একটা কিছু
বোঝা যেত !
নীলা প্রায়ই ইচ্ছা করে রাত বিরাতে
আমার সাথে কথা বলতে । কিন্তু তাই
বলে ওর মা কেন ফোন দিবে ? আর ঐ
দিনকার ঘটনার পর তো আমার কাছে
ফোন দেবার কোন কথা না । তাহলে ?
আমি ফোনটা রিসিভ করলাম । -
আসসালামু আলাইকুম আন্টি ।
নীলার মা:
সালামের উত্তর দিয়ে খানিকটা সময়
চুপ করে রইল । তারপর বলল -তোমাকে ঘুম
থেকে তুললাম ! কিছু মনে কর না । কিন্তু
...
-না আন্টি ঠিক আছে । কোন দরকার
ছিল ?
-তুমি কোথায় থাকো ?
কি রে ভাই এই রাত বিরাতে আমার
বাসার ঠিকানা কেন খুজে ! আমি
বললাম
-এই তো আন্টি মোঃপুর ।
-আচ্ছা বাবা তুমি কি একটু আসতে পারবা
আমার বাসায় ।
বাসায় ?
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম ।😲😲😲 ঘড়ির
দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় দুইটার
কাছাকাছি বাজে । এতো রাতে আমি
কিভাবে যাবো ?
আমি বললাম
-আন্টি এতো রাতে ?
-না কোন সমস্যা নাই । আমি গাড়ি
পাঠাচ্ছি । তুমি একটু আসো । প্লিজ...!!
আমি আর না বলতে পারলাম না । ফোন
রাখার পর মনে হল যে সমস্যা কি হল যে
নীলার মা আমাকে এতো রাতে
একেবারে বাসায় আসতে বলল । যাই কিছু
হোক না কেন এর সাথে যে নীলা
সরাসরি জড়িত তা আমি নিশ্চিত । কিন্তু
মেয়েটা আবার কি পাগলামো করলো
কে জানে ?
ঐ দিনতো পড়াচ্ছি এমন সময় আমার হাত
চেপে ধরলো । এই মেয়েটার কি ভয়ডর
কিছু নাই ? তাড়াতাড়ি হাত ছাড়িয়ে
নিয়ে বললাম
-কি হচ্ছে এসব ? তোমার মা যে কোন
সময় চলে আসবে ।
-আসলে আসবে!😎😎
 একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব  আমি
বললাম
-তোমার ভয় লাগে না ?
নীলা আমার দিকে তাকিয়ে বলল -
আপনার কেন এতো ভয় লাগে ? আমার আম্মু
জানলে কি এমন হবে ? আপনাকে মারবে?
-ব্যাপারটা তা না ! আমি এখানে
রাকির ভাইয়ের রেফারেন্সে এসেছি
। কিছু এদিক ওদিক হলে ওনাকে কি
জবাব দিবো আমি বল ?
-ঐ রাকিব ভাইয়ের দোহাই দিয়ে
একবার চলে গিয়েছিলেন তাই না ?
এবার ... - এবার?
নীলা একটু হেসে বলল
-কিছু না ! আর আমার জন্য না হয় একটু বকা
শুনলেনই !
আমি আর কিছু বলতেই পারলাম না ।
নীলা বলল
-কালকে কি আপনার কোন পরীক্ষা
আছে ?
-কেন ?
-আছে কি না আগে বলেন ?
-না । তবে ক্লাস আছে ।
-কাল ক্লাস করতে হবে না । কালকে
লালটিপ দেখতে যাবো কেমন ? আহা কত
সহজে বলে ফেলল লালটিপ দেখতে
যাবো ।
-দেখো কাল আমার ইম্পর্টেন্ট ক্লাস আছে

নীলা আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল
যেন এর থেকে অদ্ভুদ কথা আর সে শুনে
নাই !


আমি নিচে নেমে আসলাম । ঢাকায়
থাকি অনেক দিন কিন্তু রাতে কখনই
বাইরে বের হওয়া হয় না ! বাইরে বের
হতে না হতেই দেখলাম নীলাদের লাল
টয়োটা হাজির । এতো জলদি
কিভাবে আসলো কে জানে ?
আমি গাড়িতে উঠে বসলাম । মনের ভিতর
চিন্তাটা লেগেই আছে । আসলে কি এমন
হল কে জানে ?
এতো জরুরী ভাবে তলব করার কারণটাও বুঝতে পারছি না।😫😫
নীলা কে কি একবার ফোন দিবো ? না
থাক !
ফাকা রাস্তায় গাড়ি চলছে এগিয়ে
আমি ভবছি নীলার কথা ! মেয়েটা
আবার কোন পাগলামো করল !! ঐদিনের পর
নীলাকে নিয়ে সত্যিই আমাকে
লালটিপ দেখতে যেতে হয়েছিল ।


প্রথমে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু
সকাল বেলা নীলা ইউনিভার্সিটিতে
এসে হাজির । কালো রংয়ের
একটা জিন্স আর কামিজ পরে এসেছে । আমি
বললাম
-বাসা থেকে আসছো ? নীলা মাথা
নাড়াল ।
-স্কুল ড্রেস কই ?
-এক বান্ধবীর বাসায় থেকে বদলে
নিয়েছি ।
-তোমার ঐ বন্ধু কি বলল ?
-কি বলবে ? ও সব জানে ?
না এই মেয়েকে নিয়ে আর পারা যাবে
না । আমি যত চাচ্ছি ব্যাপারটা গোপন
রাখার জন্য এই মেয়ে ততই আরো সবার
কাছে বলে বেড়াচ্ছে । আল্লাহ জানে
কি হবে !!😭😭😭
আমার ভয় ছিল একদিন ওর ফ্যামিলি
জেনে যাবেই ! কিন্তু এতো জলদি
জেনে যাবে ভাবি নাই
। লালটিপ দেখে বাসায় আসার পরপরই
রাকিব ভাইয়ের ফোন ,
-তোমাকে আমি কি বলেছিলাম ? -কি
হয়েছে ভাইয়া ?
-জানো না কি হয়েছে ? কি করেছ
জানো না ? অন্তত আমার দিকটা ভেবে
দেখতে ?
আমি কিছু বললাম না । কারন খুব ভাল
করেই জানি ভাইয়া কি ব্যাপারে
বলছে !
রাকিব ভাই বলল
-কাল থেকে তুমি আর ও বাড়িতে পড়াতে
যাবে না । নীলার মা আমাকে
পরিস্কার ভাবে বলে দিয়েছে । আসলে
দ্বিতীয়বার তোমাকে বলাটাই আমার
ভুল হয়েছে !
(প্রথম বার যখন নীলা কে পড়ানো বন্ধ
করে দিয়েছিলাম তখন এই রাকিব ভাই ই
আমাকে আবার ওখানে নিয়ে গিয়েছিল)
। এখন মনে হচ্ছে না গেলেই বোধহয়
ভাল হত !!
ঐ দিন রাতে নীলা ফোন দিল কিন্তু
আমি ফোন ধরলাম না ! বেশ কয়েকবারই
দিল ! আর আজ রাতে এই অব্স্থা !! আমি যখন
নীলা দের বাসায় পৌছাই তখন সব কিছু
যেন নিঝুম পুরি ! নীলার বাবা বসার
ঘরে মুখ গম্ভীর করে বসে আছে । আমাকে
দেখে কিছু বলল না । দেখলাম নীলার
মা আামর দিকে এগিয়ে এল ! নীলা কি
ঘুমিয়ে আছে ??
আমি নীলার মা কে ক্ষীণ গলায় বললাম -
কি হয়েছে ? সব কিছু ঠিক আছে ?
-বসো
বলছি !
আমি সোফার এককোনে বসলাম ।
নীলার মা বসলো আমার মুখোমুখি ! -
নীলার সাথে তোমার একটা রিলেশন
চলতেছে, তাই তো ? আমি কিছু না বলে
চুপ করে রইলাম । এই কথার উত্তর দেওায়র
মত কিছু নাই ! কিন্তু আমার মনে হল কেবল
এই কথা বলার জন্য নীলার মা আমাকে
এখানে ডাকে নি । অন্য কোন ব্যাপার
আছে ! -আমি জানি নীলার আগ্রহেই এটা
হয়েছে ! নীলাই আমাকে বলেছে। আসলে
নীলা যখন জানতে পারলো যে
তোমাকে আমি আসতে মানা করে
দিয়েছি, ও খুব বেশি রিএক্ট করল না ।
আমি খানিকটা অবাক হয়েছিলাম ।
আমি ভেবেছিলাম ও খুব চিৎকার
চেঁচামিচি করবে ! নীলার মার কথা
শুনে আমিও খানিকটা অবাক হলাম ।
আমারও মনে হয়েছিল, নীলা খুব রিএক্ট
করবে ! নীলার মা বলল
-কিন্তু নীলার মনে অন্য কিছু ছিল ।
নীলা ঐ দিন থেকে খাওয়া দাওয়া
একদমই বন্ধ করে দেয় !! একফোটা পানি
পর্যন্তও ও এখনও মুখে নেয় নি !
:মাই গড !!
তাওতো দুইদিন আগের কথা ! এই দুইদিন
নীলা কিছু খাই নি !!
-আমরা অনেক চেষ্টা করেছি । কিন্তু
কিছুই খাওয়াতে পারি নি !
তুমি যদি একটু দেখতে!!

একাট হিন্দি প্রবাদের কথা মনে পড়ল ।
আব আয়া উট পাহার কি নিচে !! 😁😁
একবার
মনে হল বলি: কেন করবো ? তারপর মনে
হল, না থাক !!
নীলা না খেয়ে আছে আমার জন্য !! এটাই
আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ন মনে হল !!
নীলার ঘরে লাইট জ্বলছে । নীলা ওর
বিছানা শুয়ে আছে ! চেহায়া কেমন
যেন শুকিয়ে গেছে !!😞😞
আমি সত্যি আশ্চার্য হয়ে গেলাম ওকে
দেখ !!
এই মেয়ে আমার জন্য দুদিন না খেয়ে
থেকেছে !!😲😲
আমি ওর পাশে বসতেই ও চোখ মেলে
তাকাল ! কিছু তাকিয়ে থাকার পর মনে
হল যেন ওর চোখে পানি জমতে শুরু
করেছে ! বললাম
-এমন পাগলামো কেন করলে ?
 -কেন
করলাম ?
আমার মা আপনাকে আসতে মানা
করলো সে দোষ করলো আর আপনি আমার
সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন ? আমি
কি করেছি !
-আচ্ছা ঠিক আছে ? আমার ভুল হয়েছে ! এখন
কিছু মুখে দাও !
-না । খাবো না ।😒
-কেন খাবে না ! এই তো আমি এখানে ! -
-আমি খাবো না !😒😒
-এটা কেমন কথা ?
-আমি খাবো না ।
-আচ্ছা কি করলে খাবে বল ? -কিছু করলে
খাবো না ! আপনাকে সেদিন একটা
কাগজ দিয়েছিলাম মনে আছে ?
-আছে । -
ওখানে কি লেখা ছিল ? আমি
বলেছিলাম না আপনাকে ছাড়া আমি
মরে যাবো ! এখন সত্যি সত্যিই আমি মরে
যাবো !
-আরে বাবা, আমিতো এসেছি । যাইনি তো !
-তাহলে কেন আমার সাথে এমন করলেন ?কেন করলেন ?
আমি কি বলবো ঠিক বুঝলাম না । চুপ
করে রইলাম কিছুক্ষন !
তারপর বললাম
-বল কি করতে হবে ? যা চাইবে তাই
হবে ?
নীলা কিছুক্ষন কি যেন ভাবল । তারপর
বলল
-আমার হাত ধরে প্রমিজ করেন যে আর
কোন দিন আমাকে ছেড়ে যাবেন না । -
-ওকে,প্রমিজ করলাম !
-হাত ধরেন !
আমি নীলার হাত ধরেই কথাটা বললাম ।
-আর......
-আবার কী?
-আর...আমাকে একটা কিস করেন...!!
 -কি ???? তোমার কি মাথা খারাপ
নাকি ??
-না হলে নাই । আমি কিছু খাবো না !
আমি অসহায় বোধ করলাম । এই মেয়েটা এত্তো
জেদি যে, যা বলবে তাই করবে !! এখন আমি
কি করি ?
-আচ্ছা ! তুমি যা চাও তাই হবে ! এখন
কিছু খাও ! তোমার বাবা মা বসে
আছে ! কথা দিলাম !
নীলা কিছু যেন ভাবলো ! তারপর বলল -
প্রমিজ ??
-হ্যা কথা দিলাম !!
কিভাবে কত কিছু হয়ে গেল । আমি তো
ভেবেছিলাম আর কোনদিন এই বাসাতে
আসা হবে না । কিন্তু হয়ে গেলো। ভাগ্যে থাকলে ঠেকায় কে...!!☺☺😞


এই হল গল্প ! যেভাবে আমার ছাত্রী আমার
গার্লফ্রেন্ড হল । এবার খুব জলদি
গার্লফ্রেন্ড থেকে বউ ও হয়ে যাবে.....!!😁😁😁

                 -:সমাপ্ত:-

No comments

Powered by Blogger.